সুলতান মামুন রতন ঃ গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান খান উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো: উসমান গণিকে সাথে নিয়ে পোড়াকান্দুলীয়া খাদ্য গুদামে আকস্মিক পরিদর্শনে যান। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পরিদর্শনের খবর পেয়ে বেলা ২টায় সেখানে উপস্থিত হন গুদাম কর্মকর্তা সম্রাট। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অফিস, উপজেলা নির্বাহী অফিস এবং ওসিএলএসডি এর রেজিস্টার অনুসারে পোড়াকান্দুলীয়া খাদ্য গুদামে সরকারী হিসাবে ৭২০ মে:টন চাউল ও ২৭৪ মে:টন গম মজুদ থাকার কথা থাকলেও পরিদর্শন কালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ৬০৩:মে: টন চাউল ও ২৪ মে: টন গম মজুদ পান। এতে ১১৮ মে: টন চাউল ও ৩১ মে: টন গম খাদ্য গুদামে কম পান। একাধিক অভিযোগ রয়েছে পোড়াকান্দুলীয়া খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিম সম্রাট গুদামে কর্মরতদের সহায়তায় বিশেষ ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে ১১৮ মে: টন চাউল ও ৩১মে: টন গম কালো বাজারে বিক্রি করেছেন।
তবে গুদামের দারোয়ান আল আমিনের এর ভাষ্য, আমি নিম্ন শ্রেণীর চাকুরী করি। শুধু কাগজে পত্রেই মালামাল উঠানামা সম্পন্ন হয় কিন্তু বাস্তবে আমি দেখিনা।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান খান বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমি উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে সাথে নিয়ে আকস্মিক পোড়াকান্দুলিয়া খাদ্যগুদাম পরিদর্শনে যাই। সেখানে ১১টায় পৌঁছালেও গুদাম কর্মকর্তার দেখা পাই বেলা ২ টায়। তিনি আরো বলেন, আমি প্রতিটি বস্তা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, ওসিএলএসডি, গুদামের দারোয়ান সহ অন্যান্যদের উপস্থিতিতে গণনা করি। সরকারি হিসাব মতে গুদামে ৭২০ মে:টন চাল এবং ২৭৪ মে:টন গমের মধ্যে বাস্তবে ৬০৩ মে:টন চাল ও ২৪৩ মে:টন গম পাই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরো জানান, গুদামের মেইন গেইটের চাবি ছাড়া তিনটি গেইটের চাবিগুলো রেজাউল করিম সম্রাটের গাজীপুরস্থ বাসায় থাকে। পরিদর্শন শেষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার পুলিশ, উপস্থিত সাংবাদিক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সাধারণ জনতার উপস্থিতিতে খাদ্য গুদামের পূর্ব পাশের মুল ২টি দরজায় ৪টি তালায় সীলগালা সহ পশ্চিম পার্শ্বের অন্য দুটি গেইট এ নিজে তালা কিনিয়ে ঝুলিয়ে দেন। উল্লেখ্য প্রধান ফটক ছাড়া বাকীগুলোর ভিতরদিকেও তালা লাগানো রয়েছে। তবে গুদামে প্রধান ফটকের কলাপসিবল গেইট অজ্ঞাত কারণে খোলা রাখা হতো। গুদাম কর্মকর্তা এর কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি।
ধোবাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম এ হক এর কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি সম্পূর্ণ সংশ্লিষ্ট বিভাগের। এ ব্যাপারে মামলা হলে বিভাগীয় মামলা হতে পারে।
গুদাম কর্মকর্তাকে মালামাল সরানোর ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি অপকর্মের কথা অকপটে স্বীকার করে বলেন, গত দুই মাস আগে আমি ১৪৯ মে:টন খাদ্যশস্য উক্ত গুদাম থেকে সরিয়েছি। তিনি এ ব্যাপারে কোন লিখিত অনুমতি না থাকার কথাও স্বীকার করেন।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো: উসমান গনিকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, আমি চলতি বছর হজ্জ্ব করেছি। হজ্জ্বে যাওয়ার সুযোগে গুদাম কর্মকর্তা এতবড় একটা দুর্নীতি করবে তা ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারিনি। আমার কর্মজীবনের শেষ মুহুর্তে এসে এতবড় কেলেঙ্কারি নিজ চোখে দেখতে হবে তা কখনও ভাবিনি।
পোড়াকান্দুলীয়া বাজারের ব্যববায়ী রঞ্জু ,জয়šত বর্মন, নজরুল ইসলাম , মোঃ মাসুদ জানান প্রায়ই খুব ভোরে খাদ্য গুদাম থেকে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিমের উপস্থিতিতে চাউল ও গম পাচার হতে দেখা য়ায়।
বিষয়টি সর্বমহলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন