বৃহস্পতিবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৪

ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চীনামাটির খনি



ডেস্ক রিপোর্ট: সিরামিক শিল্পের দেশীয় কাঁচামালের উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ হচ্ছে চীনামাটি। বাংলাদেশের দুটি উল্লেখযোগ্য চীনামাটির খনির মধ্যে একটি রাজশাহীতে এবং অপরটি যৌথভাবে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া ও  নেত্রকোনার দুর্গাপুরে অবস্থিত। ধোবাউড়া উপজেলার ভেদিকুড়া চীনামাটির খনির দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে প্রতিদিনই বেড়িয়ে আসছে আরো চমকপ্রদ তথ্য। এগ্রো সিরামিক কোম্পানীর লাগামহীন মাটি উত্তোলন ও পাচারের পেছনে রয়েছে পারিবারিক কাহিনী। জালিয়াতির মাধ্যমে মালিক বনে যাওয়া গোলাম রহমান কিবরিয়া(তপন) যে কোন সময় খনিটি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার ভয়ে এবং যাতে ভবিষ্যতে অংশীদারদের কেউ খনন কাজে আসলেও লাভের দেখা না পান তাই মাটি উত্তোলনের ক্ষেত্রে ভয়ংকর ধবংসাত্মক উপায় বেছে নিয়েছেন। খনন কাজ পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায় খাল খননের দৃশ্য। চারিদিকে পুকুরের মত পাড় রেখে খননের  নিয়ম থাকলেও উত্তোলন হচ্ছে ড্রেনেজ সিস্টেমে। ফলে বর্ষায় এই খনিতে ধ্বস নামার পাশাপাশি পানির প্রবাহে মূল্যবান খনিজ চলে যাবে আশপাশের ফসলের মাঠ ও নিচু ভূমি ও জলাশয়ে।  এতে একদিকে আশপাশের আবাদী জমি নষ্ট হবে আর ধবংশ হওয়ার আশংকা রয়েছে পার্শ্ববতী বিলের মৎস অভয়ারণ্য। তবে এতে এগ্রো সিরামিক কোম্পানীর কিছু যায় আসে না। তার পরিবারের লোকজনের দাবি, মুখের মিষ্টি কথায় যৌক্তিক উপস্থানায় যে কাউকে বশে আনার ক্ষমতাসম্পন্ন গোলাম রহমান কিবরিয়া(তপন) খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে প্রশাসনের সকল স্তরই নিজের নিয়ন্ত্রনে নিতে সক্ষম হয়েছেন। আর তাই খনি এলাকার আতঙ্ক হিসেবে কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পাচ্ছে না। ২০০৭ সাল থেকে ডিও লেটারের অতিরিক্ত হাজার হাজার বস্তা চীনামাটি লুটে নিয়ে আজ সে কোটিপতি।
গত০ ৫ এপ্রিল “দৈনিক-যোগাযোগ প্রতিদিন”  ও  “দৈনিক কালের আলো”পত্রিকায় এ নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশের পর সাধারণ শ্রমিক ও তথ্যদান কারীদের মধ্যে বিরাজ করছে তপনের সাথে বহন করা পিস্তল আতঙ্ক।

তার পরিবারের পক্ষ থেকে  আরো জানানো হয়, “মরহুম এম এ মতিন এর প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স নামে প্রতিষ্ঠানটি সুনামের সাথে মাইনিং করে ১৯৯৫ সাল থেকে। ২০০২ সালে এম এ মতিন সাহেব মারা গেলে ওয়ারিশ সুত্রে এই কোম্পানীটির মালিক হন ৫ভাই ও ২ বোন। পিতার মৃত্যুতে শোকে কাতর অন্যান্য সদস্যদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে গোলাম কিবরিয়া তপন গোপনে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। ২০০৭ সালে  তপন কৌশলে জালিয়াতি মাধ্যমে কোম্পানীটির নাম পরিবর্তন করে এগ্রো সিরামিক কোম্পানীতে রূপান্তর করে। পরিবার যাতে মুখ খুলতে না পারে এজন্য সে নিজের নামে ভূয়া কাগজ পত্র দেখিয়ে লাইসেন্স করে একটি পিস্তল ব্যবহার করতে শুরু করে।”
পরিবারের সদস্যদের উপর পিস্তল আতঙ্ক সৃষ্টি করে ধোবাউড়ায় নিজের আধিপত্য বিস্তারের নেশায় চীনামাটির খনি এলাকায় সে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে সমর্থ হয়। সাধারণ মানুষের কাছে সে মুখোশধারী অভিনেতা। অনেকেই অস্ত্রের ভয়ে তার লুটপাটের ব্যাপারে মুখ খোলার সাহস পায়না। প্রতিবাদী সাধারণ মানুষগুলোকে একদিকে যেমন মাইনে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছেনা অপরদিকে তার অপকর্মের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করায়  দেয়ালে পিঠ ঠেকার উপক্রম হওয়ায় যে কোন মুহুর্তে গর্জে ওঠতে পারে তপনের পিস্তল এমনটাই আশংকা করছেন তারা। ২০০৭ সাল থেকে ১০০ বস্তার ডিও লেটার ইস্যু করিয়ে প্রায় ৪০ হাজার বস্তা করে মাটি নিয়ে আজ সে কোটিপতি।
উল্লেখ্য আগে প্রতি মাসে ডিও হতো একটি আর বর্তমানে মাসে ৩ থেকে ৪টি ডিও ইস্যু করিয়ে চলছে মহা লুটপাট।
সম্ভাব্য ডিও লেটার আসুক বা না আসুক এই মাইনে দীর্ঘদিন ধরে মাটি উত্তোলনে কোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বিষয়টি চতুর তপনের কারসাজিতে প্রশাসনের দৃষ্টির আড়ালেই থেকে যায় এতদিন। বর্ষার আগে মাটি খাদকের ক্ষুধা মেটাতে আখেরি উত্তোলন অব্যহত রয়েছে।
এলাকাবাসী জানান,  খনি থেকে মাটি উত্তোলনের কোন প্রকার নিয়ম নীতি ্ অনুসরণ না করেই আবারও অবৈধ পাহাড় কাটার মহোৎসব শুরু হয়ে গেছে।

কোন মন্তব্য নেই: