শনিবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৪

ধোবাউড়ায় পাহাড়ী সেলিমের বাসায় দুধর্ষ চুরি ---পরিবারের দাবি আবারও হত্যাচেষ্টা



ডেস্ক রিপোর্ট: ধোবাউড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নিহত ফুরকান উদ্দিন সেলিম মির্ধার ছোট ভাই বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মজনু মিয়াকে হত্যা চেষ্টার খবর পাওয়া গেছে। গত ৬ নভেম্বর দিবাগত রাতে প্রয়াত সেলিম মির্ধার বাসায় দুর্বৃত্তরা প্রবেশ করে ঘরের গুরুত্বপূর্ণ মালামাল বিশেষ করে স্বর্ণালংকার, দলিল পত্র, বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবই, একটি স্বর্ণের নৌকা, একটি রূপার টুপি সহ বিভিন্ন জিনিস  লুট করে নিয়ে যায়। পরদিন বিকেলে মজনু মির্ধার মাতা ও তার ভাগ্নিকে সাথে নিয়ে বিকেল ৫টায় সেলিম মির্ধার বাসায় গিয়ে মেইন গেইটের তালা খুলে ভিতরে প্রবেশ করেন। পরে ঘরের মুল ফটকের ক্যাঁচি গেইটের তালা খুলা এবং তালা লাগানোর স্থানটি ভাঙ্গা দেখে প্রথমে ঘাবড়ে যান। পরে ভিতরে গিয়ে দেখতে পান সবকটি রুমের দরজা খোলা এবং আলমারি, সুকেস, ওয়্যারড্রপ এর সব মালামাল এলোপাথারি ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। সাথে সাথে পুলিশকে খবর দিলে ধোবাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম এ হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। মজনু মিয়ার স্ত্রী জানান, গত কয়েকদিন ধরে আমাদের নিজের বাসায় ঘুমাতে পারিনা। কে বা কারা রাতের বেলা ঘরের টিনের চালে ইট সুরকি নিক্ষেপ করে। সব সময় একটা আতঙ্ক নিয়ে থাকতে হচ্ছে। তাই চেয়ারম্যান (মজনু মিয়া) রাতে বড় ভাইয়ের( সেলিম মির্ধা) বাসায় ঘুমায়। ঘটনার রাতে আমি জোর করে তাকে বাসায় রাখি। আর ঐ রাতেই ভাইজানের বাসায় লুটপাটের ঘটনা ঘটে। তিনি আরো জানান, আমার স্বামীকে হত্যা করতেই ওরা এসছিল। না পেয়ে ঘরের মালামাল নিয়ে চলে গেছে। তিনি এ ঘটনার জন্য সমাজ কল্যান প্রতিমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি কামনা করেন। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার মো: মীর ইব্রাহিম বলেন, এ ঘটনা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে বর্তমান চেয়ারম্যানের জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই। এটা গভীর ষড়যন্ত্রের ফল আর পরিষ্কার হত্যাচেষ্টা। আমি এর সুষ্ট তদন্ত ও বিচার দাবি করছি। মজনু মিয়ার মা সমলা খাতুন বলেন, আমার এক পুতেরে মাইরাও এদের তৃপ্তি হইলনা। আরেক পুতেরে মারবার লাইগা উইঠ্যা পইড়া লাগছে। আমি এর সুষ্টু বিচার চাই।
মামলার বাদী বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মজনু মিয়া জানান, আমার ভাইয়ের খুনিরা আমাকে প্রতিনিয়ত প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। তারাই এ ধরনের নাশকতামূলক ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা এখন প্রকাশ্যে উপজেলা আওয়ামীলীগের রাজনীতিকেও  নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে এর নেপথ্যেও রয়েছে একটি সক্রিয় চক্র। আমি সম্পূর্ণরুপে সর্বদা নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি।
এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই সাদির উদ্দিন বলেন, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। কিছু আলামতও জব্দ করেছি। যেহেতু ঘটনার রাতে বাসায় কেউ ছিলনা সেহেতু এ মুহুর্তে বিস্তারিত কিছু বলতে পারবনা। তবে সুষ্টু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের খুজে বের করে অবশ্যই আইনের হাতে সোপর্দ করব।
এ ঘটনার ব্যাপারে ধোবাউড়া থানায় ৮ নভেম্বর পেনাল কোড ৪৫৯/৩৮০/৫০৬(২) ধারা মোতাবেক একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা নং ০৪/১৩৪। মামলার এজাহারে মোহাম্মদ মজনু মিয়া বলেন, বিবাদীঃ ১। আনোয়ার খান (৩৫), ২। হাসেম খান (৪৫), ৩। রতন খান (৩৭), ৪। বকুল খান (৩৯) সর্বপিতা-মৃত আবু খান, সাং- রণসিংহপুর, ৫। আঃ শহিদ (৪৮), পিতা-মৃত ছুরত আলী, সাং-দক্ষিণ রাণীপুর, থানা-ধোবাউড়া, জেলা-ময়মনসিংহগনসহ আরো অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জন এক দলভূক্ত সন্ত্রাসী, খুনী প্রকৃতির লোক। বিবাদীগন পূর্ব থেকেই আমাকে খুন করার উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকে এবং হুমকি অব্যাহত রাখে। আমি বিষয়টি অবগত হইয়া আমার নিরাপত্তার লক্ষ্যে ধোবাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন  আমার বড় ভাই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মরহুম ফুরকান উদ্দিন সেলিম মির্ধার অপেক্ষাকৃত সুরক্ষিত বাসায় প্রায় সময় রাত্রি যাপন করি। বিগত ০৬/১১/২০১৪ইং তারিখ রোজ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আমি আমার স্ত্রী সন্তানাদি নিয়ে ধোবাউড়া আদর্শ ডিগ্রি কলেজের সামনে নিজ বাসায় রাত্রি যাপন করি। ঐ দিন রাত এগার ঘটিকার পর যে কোন সময় বিবাদীগন আমাকে খুন করার উদ্দেশ্যে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আমার বড় ভাই ফুরকান উদ্দিন সেলিম মির্ধার বাসার কেচি গেইট ও দরজা ভাঙ্গিয়া ভিতরে অনধিকার প্রবেশ করিয়া আমাকে খুজিয়া না পাইয়া বিভিন্ন রুমের সুকেজ, ড্রেসিং টেবিল, ওয়্যারড্রব ও লোহার আলমারির তালা ভাঙ্গিয়া ১০(দশ) ভরি ওজনের স্বর্ণালঙ্কার যাহার আনুমানিক মুল্য ৪,০০০০০/=(চার লক্ষ) টাকা এবং নগদ ২,০০০০০/= (দুই লক্ষ) টাকাসহ গুরুত্বপুর্ণ কিছু কাগজপত্র লুটপাট করিয়া নিয়া রাত আনুমানিক ৪টার দিকে বিবাদীগন বাসা থেকে বের হওয়ার সময় চিৎকার করিয়া বলতে থাকে যে, মজনু তোর বড় ভাইকে হত্যা করেছি আজ তোকে পাইলেও খুন করিয়া লাশ গুম করিয়া ফেলিতাম বলিয়া ঘোষনা দিয়া ৫টি মটরসাইকেল যোগে বাসার সামনে থেকে দক্ষিণ দিকে চলিয়া যায়।
বিষয়টি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।

কোন মন্তব্য নেই: