শনিবার, ১০ জানুয়ারী, ২০১৫

ধোবাউড়ায় আনন্দ স্কুলের শিক্ষক-অভিভাবক ও টিসি’র ত্রিমূখী দ্বন্দ্ব শুরু-সহিংসতার আশংকা

নিজস্ব সংবাদদাতা : ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলায় রস্ক প্রকল্পের আনন্দ স্কুলের সুখ-দু:খের ইতিহাস বেশ পুরনো। ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ধোবাউড়ায় কোন ট্রেইনিং কো-অর্ডিনেটর না থাকায় নানাভাবে হয়রানীর শিকার হওয়া আনন্দ স্কুলের  শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অক্লান্ত শ্রম ও ধৈর্য্যরে বিনিময়ে টিকে থেকে ২০১৪ সালে ১৯৭টি স্কুলের ১৫০২ জন শিক্ষার্থী ৫ম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে। এর মধ্যে ১৩৪২ জন শিক্ষার্থী যাদের অধিকাংশই ভালো নম্বর পেয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় এবং ২ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পায়। ধোবাউড়ায় আনন্দ স্কুলের গড় পাশের হার ৮৯.৩৫ শতাংশ। আনন্দ স্কুলের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, মা-বাবার ইচ্ছাই ছিলনা তাদেরকে লেখাপড়া করানোর। আনন্দ স্কুল শুরু হওয়ায় তারা অন্তত: জীবনে একটি সার্টিফিকেট লাভ করতে পেরেছে। তবে অনেক মা-বাবার ধ্যান ধারণা অনেকটাই পাল্টে গেছে। সমাপনী পরীক্ষায় পাশের পর এবার অধিকাংশ শিক্ষার্থী যারা ইতিমধ্যে উপবৃত্তির টাকা পেয়েছে তারা মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছে। আর যারা একান্তই হত-দরিদ্র তারা তাদের সন্তানদের নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে পেরেছেন এমনই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। অনেকেই বলছেন আনন্দ স্কুলের ছেলে মেয়েদের প্রায় ১৮ মাসের বকেয়া উপবৃত্তির টাকাগুলো দ্রুত পেলে তারাও মাধ্যমিকের ৬ষ্ট শ্রেনীতে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা পূরণ করতে পারতো। তাছাড়া বর্তমানে যেসব স্কুলের শিক্ষার্থীরা সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে পাশ করেছে সেসব স্কুলের শিক্ষকরা বর্তমানে চরম হতাশার মধ্যে পড়েছেন। সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহনের আগে বলা হয়েছিল পরীক্ষায় যেসব আনন্দ স্কুল অংশগ্রহন করবে শুধু তারাই বেতন-উপকরণ ও আনুসঙ্গিক ভাতাদি বকেয়া সহ পাবে। উল্লেখ্য সাবেক প্রজেক্ট ডিরেক্টর শওকত আকবর গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর ধোবাউড়া  এসে ডি-আর ভূক্ত শিক্ষকদের পরীক্ষায় অংশগ্রহনের শর্তে সকল বকেয়া পরিশোধের ওয়াদা করেছিলেন। বেতন ভাতাদির অপেক্ষায় থাকা শিক্ষকদের মধ্যে ইতিমধ্যেই আশা-নিরাশা ও হতাশা স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে। অনেক শিক্ষক জানিয়েছেন, আমরা সমাপনী পরীক্ষায় আমাদের শিক্ষার্থীদেরকে অংশগ্রহন করিয়ে ৮৯.৩৫% ফলাফল করেছি। একজন মাত্র শিক্ষক হয়ে পঞ্চম শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের সকল বিষয় পড়াতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি। অভিভাবকদেরকে বুঝিয়ে উপবৃত্তির সমস্ত বকেয়া টাকা পয়সা পাবে এরকম কথা দিয়ে নিজের পকেটের অর্থ ব্যয় করে সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহন করিয়েছি। ভালো ফলাফলও হয়েছে। তবে এখন আমাদের পাওনা টাকা দিতে এত গড়িমসি কেন? 
কতিপয় শিক্ষকের সাথে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ঝগড়ার ঘটনাও ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা না পেয়ে শিক্ষকদেরকে নানাভাবে হেয় প্রতিপন্ন এবং গালিগালাজ করছেন এমন সংবাদ প্রতিদিনই আসছে বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে। ফলে শিক্ষকরা নিজেদের মান-সম্মান রক্ষার্থে বর্তমান ট্রেইনিং কো-অর্ডিনেটর মো: শাহজালাল এর দ্বারস্থ হয়েও কোন আশার বানী শুনতে পারছেন না। ফলে ট্রেইনিং কো-অর্ডিনেটরের প্রতি শিক্ষকদের ক্ষোভ ক্রমশ: বাড়ছে। মাঝে মাঝে অপ্রীতিকর ঘটনার খবরও শুনা যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটর মো: শাহজালাল এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি চরম বেকায়দায় আছি। শিক্ষকরা আমাকে নানাভাবে বকেয়া বেতন ভাতাদির জন্য প্রেসার ক্রিয়েট করছে। আমি পিডি অফিসে গত ১৫ ডিসেম্বর-২০১৪ তারিখে স্থগিতকৃত আনন্দ স্কুল সমূহের বকেয়া বেতন-ভাতাদির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বকেয়া বেতন ভাতাদি দ্রুত প্রদানের ব্যাপারে আমাকে আশ্বস্থ করেছেন। কিন্তু  শিক্ষকরা আমাকে যেভাবে চাপ দিচ্ছে আমিতো আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সেভাবে চাপ দিতে পারিনা। সব মিলিয়ে আমি মারাতœক মানসিক অস্বস্থির মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।
ধোবাউড়া উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ধোবাউড়া উপজেলায় ২০১০ সালে স্থাপিত ১২৭টি আনন্দ স্কুলের অনুদান ও ভাতা ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে স্থগিত রয়েছে। ২০১৪ সালের সমাপনী পরীক্ষায় এই ১২৭টি স্কুলের মোট ৯৫৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৮৬৭ জন শিক্ষার্থী  সমাপনী পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করেছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো: আতাহার আলী খান এ ব্যাপারে বলেন, ১২৭টি স্কুল সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহন করলে তাদেরকে সমস্ত বকেয়া বেতন-ভাতাদি প্রদান করা হবে এমনটাই আশ্বাস দিয়েছিলেন পিডি মহোদয়। আমি আনন্দ স্কুল সমূহের বেতন-ভাতাদি দ্রুত প্রদানের জন্য উর্ধ্বতন কর্তপক্ষের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।”
ধোবাউড়া প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো: আব্দুর রাশিদ বলেন, ‘আনন্দ স্কুল সমাপনীতে ৮৯.৩৫% রেজাল্ট করতে পারবে তা কেউ কখনও কল্পনাও করেনি। তিনি আরো বলেন, শিক্ষকদের শ্রম স্বার্থক হয়েছে। তাই রস্ক প্রকল্পের সুনাম রক্ষার্থে অতি দ্রুত বকেয়া অর্থ প্রদান করে শিক্ষক-অভিভাবকদের মধ্যে ইতিমধ্যেই সূত্রপাত হওয়া অপ্রীতিকর ঘটনা সহিংসতায় রূপ নেওয়ার আগেই থামানো দরকার ।’