ধোবাউড়া করেসপন্ডেন্ট: ধোবাউড়া উপজেলায় এনার্জি ড্রিংকস এর মরণ নেশায় দিনদিন উঠতি বয়সের যুবসমাজ আসক্ত হয়ে পড়ছে। এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী বিভিন্ন কোম্পানীর নামে লেবেলকৃত নকল এসব বিষাক্ত পানীয় বাজারজাত করছে। নজরকাড়া লেবেল বানিয়ে বোতলের গায়ে লাগিয়ে মনভূলানো নাম দিয়ে এক শ্রেনীর ডিস্ট্রিবিউটর উপজেলার বিভিন্ন বাজারে নির্দিষ্ট কিছু দোকানে এনার্জি ড্রিংকস সরবরাহ করছে। অধিকাংশ এনার্জি ড্রিংকস এর গায়ে “ শুধুমাত্র প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ” কথাটি ব্যবহার করে স্কুল ও কলেজগামী তরুনদের মনে কৌতুহলের সৃষ্টি করছে। ইতিপূর্বে এসব পানীয়গুলো পরীক্ষা করে ভয়াবহ মাদক আফিম এর উপস্থিতি পেয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বিক্রেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, কথিত কোম্পানী লেবেল বিহীন এনার্জি ড্রিংকস এর বোতল ও আলাদাভাবে কিছু স্টিকার ডিস্ট্রিবিউটরদেরকে সরবরাহ করে থাকে। পরে লেবেলগুলো নিজ দায়িত্বে লাগিয়ে কর্মচারীদের মাধ্যমে দোকানে পৌঁছে দেয় তারা। এক একটি বোতল ১৫টাকা থেকে ২০টাকায় কিনে খুচরা দোকানীদের কাছে ৩০টাকা থেকে ৪০টাকায় বিক্রি করা হয়। আর দোকানদাররা সেগুলো বিক্রি করে ৪৫ টাকা থেকে ৬০টাকায়। কোন কোন ড্রিংকস আবার ১৬০ টাকায় বিক্রয় করা হয়। একটিভ, জিনসেং, হর্স পাওয়ার, ব্ল্যাক হর্স, ডাবল ফিলিংস, রুচিতা, পাওয়ার প্লাস সহ বিভিন্ন নামী বেনামী মনগড়া কোম্পানীর প্রায় ২০টি ব্র্যান্ড এর এনার্জি ড্রিংকস এ ছেয়ে গেছে ধোবাউড়া উপজেলা।
শখের বসে এসব এনার্জি ড্রিংকস খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া কয়েকজন ভূক্তভোগী জানান, এই ড্রিংকস গুলো খাওয়ার ১০ মিনিট পর থেকেই চোখ লাল হয়ে আসে, প্রচন্ড মাথা ব্যাথা শুরু হয়, পাকস্থলীতে প্রচন্ড এসিড হয়, বমি বমি ভাব আসে, আকস্মিক যৌন অনুভূতি সৃষ্টি হয়, খাবার গিলতে কষ্ট হয়, মনে হয় যেন খাদ্যনালীটা দগ্ধ হয়ে গেছে। পাশাপশি হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় আর রাতে ঘুম আসেনা, নাক জ্যাম হয়ে থাকে ফলে নি:শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, যার প্রভাব পরবর্তী ২৪ ঘন্টা বা তারও বেশি সময় পর্যন্ত অব্যহত থাকে।
ডাক্তারদের ভাষ্যমতে, বর্তমানে বাজারে ব্যাপকভাবে সরবরাহকৃত আফিম বা নেশাদ্রব্য, যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল ও কেমিক্যাল মেশানো নকল এনার্জি ড্রিংকস নিয়মিত পান করলে কিডনী, লিভার, প্যানক্রিয়াস দ্রুত কার্যক্ষমতা হারাবে। ফলে শরীর স্থুল হওয়ার পাশাপাশি টাইপ-২ ডায়াবেটিস এর প্রচন্ড ঝুঁকি রয়েছে। পাশাপাশি সাইনাস এ প্রদাহ হয়ে নাকের ভিতরে পলিপাস বা মাংস বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে। যারা গ্যাস্ট্রিক আলসারে ভূগছে তারা এসব এনার্জি ড্রিংকস পান করলে দেখা দিতে পারে জলিঞ্জার এলিসন সিনড্রোম যার ফলে ঝাঁঝরা হয়ে যেতে পারে ক্ষুদ্রান্ত্র। আর উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা এসব ড্রিংকস পান করলে ব্রেন স্ট্রোক জনিত কারণে আকস্মিক মৃত্যু ঘটতে পারে। আর যারা এলার্জিজনিত সমস্যায় প্রায়ই ভোগেন তাদের জন্য এ ধরনের ড্রিংকস পান করা আতœঘাতি। মোমেনশাহী আয়ুর্বেদ কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল আশিষ কুমার এ প্রসঙ্গে বলেন, যৌনতার নেশায় যারা নেশাযুক্ত এসব এনার্জি ড্রিংকস সেবন করবে তারা খুব অল্প দিনেই তাদের যৌন সক্ষমতা হারাতে পারে।
এ ধরনের নকল এনার্জি ড্রিংকস অবাধে বাজারজাত করা বন্ধে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট কাউকেই কোন ধরনের পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। এ প্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামীলীগ এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ধোবাউড়া মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হেলাল উদ্দিন বলেন, জেলা সিভিল সার্জনের সদিচ্ছা থাকলে স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর এনার্জি ড্রিংকস এর নামে এসব মাদক অবাধে সরবরাহকারী এবং বিক্রয়কারীদের হাতেনাতে ধরা সম্ভব। উপজেলা লেবেল এর স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা যদি অভিযান চালাতে ভয় পান তবে তাদেরকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছি। তাছাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানালেও উনি তড়িৎ ব্যবস্থা নিতে পারবেন বলে আমি মনে করি।
এদিকে ধোবাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ এর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
ধোবাউড়া থানার ওসি এম এ হক জানান, এখন পর্যন্ত আমার কাছে কোন অভিযোগ আসেনি। তবে অবৈধ কোন কিছুর সঠিক তথ্য আমাকে জানালে আমি তড়িৎ ব্যবস্থা নিব।
যে যাই বলুক না কেন, অবিলম্বে এই সর্বনাশা এনার্জি ড্রিংকস এর মরণ ছোবল থেকে সন্তানদের অকাল মৃত্যু ঠেকাতে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবেন এমনটাই ধোবাউড়া উপজেলার সচেতন অভিভাবক মহলের প্রাণের দাবি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন